শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

স্বদেশ ডেস্ক: দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত দুর্ধর্ষ ৫০ জঙ্গি এখনো ধরা পড়েনি। ইতিহাসের এ কালো অধ্যায়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার কার্যক্রম গত ১৪ বছরেও শেষ হয়নি। আজ শনিবার সেই ভয়াল ১৭ আগস্ট। এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী জোরালো সব অভিযানে বারবার বিপর্যস্ত হলেও নির্মূল করা যায়নি জঙ্গিদের।

সম্প্রতি ভিন্নমাত্রায় নতুন রূপে জানান দিচ্ছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার পরামর্শ দিয়েছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, এলিট ফোর্স র‌্যাব ও অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিবাদের ঝুঁকি পুরোপুরি নির্মূল করা সময়সাপেক্ষ। জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় সহায়ক পরিবেশ পেলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর থাকে তাদের রুখে দিতে। ঝুঁকি থাকলেও এ মুহূর্তে জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ধরনের হামলা চালানোর সামর্থ্য নেই বলেই মনে করেন তারা।

২০০৫ সালের এ দিনে মুন্সীগঞ্জ ব্যতীত দেশের ৬৩ জেলায় ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। সিরিজ বোমা ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয় ১৬১টি। ইতোমধ্যে রায় দেওয়া হয়েছে ১২৮টির। বর্তমানে ৩৩টি মামলা বিচারাধীন। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে

আসে জেএমবি। এর পর দেশজুড়ে শুরু হয় একের পর এক জঙ্গি বোমা হামলা। এসব হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন। আহত হন ৪ শতাধিক। বাংলাদেশ জঙ্গিকবলিত হয়ে পড়ায় সেই ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিম-লে আলোচিত হয়। জঙ্গি গ্রেপ্তারে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় গ্রেপ্তার হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুুল আউয়াল ও হাফেজ মাহমুদসহ ৭৪৭ আসামি। ২০০৭ সালের মার্চে শীর্ষ ৬ জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ পর্যন্ত জেএমবির ১৫ জন শীর্ষ নেতার ফাঁসির দ- দিয়েছেন আদালত।

সিরিজ বোমা হামলার পর জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশ। কয়েক বছর বিপর্যস্ত থাকার পর ধীরে-ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। গত কয়েক বছরে সেই অপশক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলা ফের ভাবিয়ে তোলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। গত এপ্রিল ও মেতে রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে পৃথক দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ দুটি ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্ত কর্তৃপক্ষ। এর পর সম্প্রতি সময়ে রাজধানীতে পৃথক দুটি ঘটনায় দুটি ট্রাফিক পুলিশের বক্সে বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনায় সেই আশঙ্কার রেশ ছিল। এমন আশঙ্কার মধ্যে ঈদুল আজহার দুদিন আগে রাজধানীতে নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’-এর ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি ইউনিট। এমন প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদবিরোধী নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঢেলে সাজানো হয়। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।

অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘জঙ্গিবাদের ঝুঁকিটা একেবারে চিরতরে যাবে এটা ভাবার কারণ নেই। হয়তো ফরম্যাটটা পরিবর্তন হবে। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনেক বেশি প্রস্তুত। তাদের অবস্থান থাকলেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। তারা যদি কখনো অনুকূল পরিবেশ পায় তা হলে ভয়ঙ্কর দিয়ে উঠতে পারে। সেই হিসেবে ঝুঁকিটা রয়েই গেছে। আভিযানিক সাফল্য আমাদের এসেছে। এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ জঙ্গিবাদবিরোধী বেসিক চারটি কাজের একটি এটি। বাকি কাজগুলোর কিছুটা শুরু হয়েছে, অন্যগুলো করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। তবে এ ব্যাপারে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল জঙ্গিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসছে। জঙ্গিদের কঠোর নজরদারি করতে র‌্যাব সদর দপ্তরসহ প্রতিটি ব্যাটালিয়ন সজাগ রয়েছে।’

অপরাধ বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘সামাজিক সম্প্রীতি ও মানুষের নিরাপত্তার দিক থেকে চিন্তা করলে বিচারে এ ধরনের ধীরগতিতে সাধারণ মানুষ কিন্তু এক ধরনের আশাহত। এতে ভয়ের সংস্কৃতিও তৈরি হতে পারে। আবার জঙ্গি তৎপরতাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’

ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে তেজগাঁও ও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা দুই মামলার রায় হয়ে গেছে। পুলিশ ৮টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) জমা দিয়েছে। বাকি ৮ মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ চলছে। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেন না। বেশিরভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরিবর্তন হয়েছে। এ রকম নানা কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877